- বদলগাছীতে ৪৮বছরেও সংরক্ষন হয়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর
– খালিদ হোসেন মিলু (সিনিয়র সংবাদ দাতা ও তথ্য দায়)
বেঁচে যাওয়া ঐ মুক্তিযোদ্ধা জানায় ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে তাঁরা ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে আসে। কারন তারা ৩ জন ছিল ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আর ঐ ৩ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আরো ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে বদলগাছীর উপর দিয়ে ভারতে যাওয়ার পথে ঐদিন সকালে বদলগাছীর বালুভরা ইউপির মির্জাপুর মোড়ে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সন্ধেহে আটক করে কতিপয় রাজাকারেরা। আটকের পর পাক-হানাদার বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করলে নির্মম নির্যাতনের এক পর্যায়ে আধাইপুর ইউপির সেনপাড়া গ্রামের জঙ্গলে শাড়িবদ্ধ ভাবে তাদের চোখ বেঁধে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৩ মুক্তিযোদ্ধা গুলির শব্দ পেয়ে তাঁরা চিৎ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কৌশল করে প্রাণে বেঁচে যায়। আর বাঁকী ৬জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। বেঁচে যাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হাতের বাঁধন খুলে ঐদিন দুপুরের পর ছোট যমুনা নদী পার হয়ে ডাঙ্গিসারা গ্রামে গিয়ে উঠে।
এসময় সে দেখতে পায় তার আরও একজন সঙ্গি ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়ে নদীতে এসে পানি খাচ্ছে।
বেগতিক অবস্থার মধ্যে স্থানীয় লোকজন ঐ ২ জন আহত মুক্তিযোদ্ধাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেয় । বেঁচে যাওয়া ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিজ বাড়িতে যায়। ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়েস্বজনরা ছুটে আসে ডাঙ্গিসারা গ্রামে। স্বজনরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নিহত ৬ মুক্তিযোদ্ধার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে এনে ডাঙ্গিসারা গ্রামে ছোট যমুনা নদীর ধারে গণ কবর দেয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এনামুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের গন কবর সহ মুসলমানদের কবরস্থান হিসাবে ডাঙ্গিসাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দিনেশ সিংহ এর পিতা রাম জনম সিংহ সাড়ে ১৬ শতক জমি কবরস্থানের নামে রের্কড করে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর সংরক্ষন ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের জন্য বহুবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের নিকট ধর্না দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন ফল হয়নি। সেই ৬ আত্মত্যাগী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর অরিক্ষত অবস্থায় ভুমিক্ষয় ও ভূমিধ্বসের কারনে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। ডাঙ্গিসারা গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী সহ গ্রামবাসী জানান, তারা নিজ হাতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সেবা দিয়েছে এবং যে ৬ জন মারা গিয়েছে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে কবরস্থ করেছে। স্বজনরা মান্দা উপজেলা থেকে এসে এখানে মিলাদ মাহাফিলও করেছেন।
৬ শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ময়নম ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত করিম সোনারের ছেলে কাদের বক্স, মৃত কাওছার আলী মন্ডলের ছেলে শাকায়েত মন্ডল, মৃত মকা আকন্দের ছেলে ইয়াজ উদ্দীন আকন্দ, মৃত লইম উদ্দীন মন্ডলের ছেলে লুৎফর রহমান মন্ডল, প্রসাদপুর ইউনিয়নের মৃত শশি মন্ডলের ছেলে মোহাম্মদ আলী খোকা, গনেশপুর ইউনিয়নের মৃত মাদার উদ্দীন এর ছেলে রিয়াজ উদ্দীন এবং প্রাণে বেঁচে যাওয়া ৩ জন হলেন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ময়নম ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত মীর মোল্লার ছেলে মোঃ নজরুল মোল্লা, মৃত কলিমুদ্দীন মন্ডলের ছেলে নিকবর মন্ডল, মৃত খয়রুল মন্ডলের ছেলে গছির উদ্দীন মন্ডল। বদলগাছী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুত্রে এ তথ্য জানা যায়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে জরুরী ভিত্তিতে গণকবরস্থানটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ঐ গ্রামের প্রবীন লোকদের ভাষ্যে জানা যায়, গণকবর সংরক্ষনের জন্য বারবার ইউএনও ও এমপি বরাবরে আবেদন জানালেও কোন ফল হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোঃ জবির উদ্দীন (এফ.এফ) জানান, উপজেলার ৬ টি গণকবরের তালিকা দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ডাঙ্গিসারা গ্রামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গণকবরস্থান রয়েছে এবং এ তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া আছে। এই গণকবরস্থানটি সংরক্ষণ করা জরুরী বলে তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাঃ আবু তাহির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ডাঙ্গিসাড়া গ্রামের গণকবরটির শহীদ মুক্তিযো
দ্ধাদের তালিকা ফাইল দেখে আবেদন পাওয়া গেলে গণকবরস্থানটি সংস্কার সহ সংরক্ষণ এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরো সংবাদ পড়ুন :
- ধর্ম জিজ্ঞাসা……………প্রবেশ ……..
- ইতিহাস .…প্রবেশ ……….
- নারী ও শিশু .…প্রবেশ ……….
- লাইফস্টাইল….প্রবেশ ……….
- আমাদের ফেসবুক পেজ….. প্রবেশ ……….